নিউজ ডেক্স।। গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের ৪৪৭ জন নেতা–কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ৫ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে ১৩টি মামলায় মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ হাজার ৫৮৪।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি (তদন্ত) মতিয়ার রহমান বাদী হয়ে মঙ্গলবার মামলাটি দায়ের করেছেন। গতকাল মামলাটি দায়ের করা হলেও আজ বুধবার মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোপালগগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শেখ রাকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান (বিটু), শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান জিমি, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মাসুদ রানা, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নীতীশ রায় প্রমুখ।
মামলার বর্ণনা থেকে জানা যায়, ১৬ জুলাই এনসিপির গোপালগঞ্জ পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। আসামিরা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর জখম করে।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যার ঘটনায় মোট ১৩টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করা হয়। ১৩টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এসব মামলায় গত ১৬ জুলাই থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ।
১২ মামলার তথ্য
এর আগে, গত ২৬ জুলাই নিহত রমজান মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এ মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। গত ১৯ জুলাই রাতে ৪ যুবক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করে। ৪ হত্যা মামলায় অজ্ঞাত ৫ হাজার ৪০০ দুষ্কৃতকারীকে আসামি করা হয়। এছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে ২টি ও জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় ২টি, কোটালীপাড়া থানায় ১টি ও টুঙ্গিপাড়া থানায় ১টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫ ঘণ্টার হামলা-সহিংসতায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। পরের দিন ১৭ জুলাই গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ঘটনার দিন বিকেলে শহরে ১১৪ ধারা ও রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত কারফিউর সময়সীমা বাড়ানো হয়। এরপর একাধিকবার কারফিউয়ের সময় বাড়ানো হয়। গত রোববার (২০ জুলাই) কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। তারপর থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: আব্দুল হালিম
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: মিরপুর, কুষ্টিয়া।
মোবাইল : ০১৭১৪-৬৭৪৩২৮,